সিডনি শেলডনের বইয়ের একটা ম্যাজিক আছে। ম্যাজিকটা হচ্ছে আপনি তার বই হাতে নিবেন। কয়েকপাতা এক নিঃশ্বাসে পড়ার পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখবেন একঘন্টা ধরে পড়ছেন। এমনি কোন বই একঘন্টা ধরে পড়তে গেলে কয়েকবার হয়তো ব্রেক নেন কিন্তু ওনার বইয়ে সময়ের ব্যাপারটা আপনি টেরই পাবেন না। সাধারণত ব্যস্ততা থাকলে আমি সিডনির বইয়ে হাত দিই না। কারণ একবার পড়তে শুরু করলে দিনদুনিয়া ভুলে যাই।
সিডনির যত বইয়ের অনুবাদ আছে তারমধ্যে সবচেয়ে পাতলা,স্বল্প পৃষ্ঠার বই হচ্ছে 'দ্য নেকেড ফেস'। একশ চৌত্রিশ পাতার এই বই আপনাকে এত থ্রিল দেবে যতটা হয়তো এক হাজার চৌত্রিশ পাতার থ্রিলারেও পাবেন না। সিডনির সবচেয়ে বড় গুন উনি অযথা একটা শব্দও ব্যবহার করেন না। সিধা পয়েন্টে কথা বলেন। আর ঠিক এই ধরনের লেখাই আমি আমার টাইপের বলে মনে করি। তাই সিডনি আমার প্রিয় লেখক।
কাহিনী সংক্ষেপ- জাড স্টিভেন্স একজন সাইক্রিয়াটিস্ট। বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত সব রোগী তার কাছে আসে। যেমন হ্যারিসন বার্ক,যার সবসময় মনে হয় তাকে কেউ খুন করার চেষ্টা করছে। অথবা টেরি যে একজন হলিউড তারকা তার প্রচুর শারীরিক চাহিদা হওয়া সত্ত্বেও সে এমনসব পুরুষদের বিয়ে করে যারা শারীরিকভাবে অক্ষম। আবার অ্যান ব্লেক, সুন্দরী একজন নারী যে তার কি সমস্যা সেটাই খুলে বলতে চায় না ডক্টরকে।
এই ডক্টরের এক সমকামী রোগীকে দিয়েই গল্প শুরু। জন হ্যানসন। ডক্টরের চেম্বার থেকে বের হয়েই খুন হয়ে যায় সে।এরপর সংঘটিত হয় আরো কিছু খুন। ডাক্তারের জীবনের ওপরও নেমে আসে কালো ছায়ার থাবা।
জাডের সবসময় মনে হয় কেউ একজন তাকে খুন করতে চাইছে। কিন্তু অফিসার ম্যাকগ্রিভি তার কথা বিশ্বাস করে না। তার ধারণা ডাক্তার নিজেই এই ফাঁদগুলো তৈরি করে,কারণ সেই অপরাধী। কিন্তু ম্যাকগ্রিভির সঙ্গী অ্যাঞ্জেল বিশ্বাস করে জাডকে। সে গোপনে জাডকে সহায়তা করে, পরামর্শ দেয় তারপরেও একপর্যায়ে প্রাইভেট ডিটেক্টিভের সাহায্য নিতে হয় জাডকে৷
এই গল্পের বিশেষত্ব হচ্ছে,বেশ কয়েকবার আপনি নিশ্চিত হবেন আপনি খুনী ধরে ফেলেছেন এবং প্রতিবার লেখক আপনাকে বোকা বানিয়ে দেবেন। আপনাকে এমন ভাবাতে পারাটাও হবে লেখকের স্বার্থকতা। সবমিলিয়ে স্বল্প পৃষ্ঠার এই বইটা চরম থ্রিলিং এবং পেজ টার্নার। সময় কাটানোর জন্য এই বই আদর্শ।