বইয়ের নাম: আদর্শ হিন্দু হোটেল
লেখকের নাম: বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
প্রকাশনী: গদ্যপদ্য পাবলিশার্স
মুদ্রিত মূল্য: ২৫০ টাকা মাত্র
জনরা: চিরায়ত উপন্যাস
রকমারি ক্রয় লিংক : আদর্শ হিন্দু হোটেল - বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
উপমহাদেশে যখন ব্রিটিশদের আধিপত্য, ফিরিঙ্গিদের রাজত্ব, “আদর্শ হিন্দু হোটেল” উপন্যাসের পটভূমি, প্রেক্ষাপট সে সময়কে কেন্দ্র করেই । উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হাজারি দেবশর্মা, তার উত্থানপতনের সুচারু বর্ণনাই বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় দক্ষহাতে বইয়ের পাতায় তুলে এনেছেন।
সংক্ষিপ্ত কাহিনী:
রাণাঘাটের রেল-বাজারে বেচু চক্কত্তির “আদর্শ হিন্দু হোটেল” এ রাঁধুনি বামুণের কাজ করে হাজারী ঠাকুর। তার রান্নার সুখ্যাতির কারণে “আদর্শ হিন্দু হোটেল”র প্রবল নামডাক। ট্রেন থেকে নামা যাত্রীরা যখনই একবার হাজারী ঠাকুরের হাতের রান্না খেয়েছে, তারা দ্বিতীয়বার ঐ স্টেশনে এলে অন্য কোনো হোটেলে খাওয়া দূরের কথা যাওয়ার চিন্তাও মাথায় আনে নি। হাজারী বামুন হোটেলের কাজ করে মাসে সাত টাকা বেতন পায়, সাথে দুইবেলা খাবার। তার আদি বাড়ি এঁড়োশোলা গ্রামে, সেখানে তার ছেলে,মেয়ে,
স্ত্রী রয়েছে। মাঝেমধ্যে, কাজের চাপ থেকে অবসর পেলে সে গ্রামে গিয়ে পরিবারকে দেখে আসে। যদিও, সে সুযোগ সে কদাচিৎই পায়।
বেচু চক্কত্তির “আদর্শ হিন্দু হোটেল” এ হাজারী ঠাকুর কাজ শুরু করেছে আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। এই হোটেলের উন্নতির পেছনের পুরোটাই হাজারী ঠাকুরের হাত, বলা ভালো, চমৎকার রান্নার হাত। যারা একবার তার হাতের রান্না খেয়েছে, তারা প্রায়শই আসেন ঠাকুরের হাতের রান্না খাওয়ার জন্য। ঠাকুরের তখন গর্বে বুকটা ফুলে যায়, আনন্দে চোখ ভিজে আসে।
ভাবছেন, তাহলে তো হাজারী বামুনের দিনকাল বেশ সুখেই কাটছে “আদর্শ হিন্দু হোটেল” এ। উঁহু, আপনি ভুল ভাবছেন।
এই উপন্যাসে এক শক্তিশালী খলচরিত্র আছে, হাজারী ঠাকুরকে কেউ প্রশংসা করলে তা সেই চরিত্র সহ্য করতে পারেনা। সারাক্ষণই তিনি তক্কে তক্কে থাকেন কীভাবে হাজারী বামুনকে সবার সামনে অপদস্থ করা যায়, তাকে কীভাবে সবার সামনে বিব্রত করা যায় সেই সুযোগ খোঁজেন তিনি সর্বদা। খলচরিত্রের নাম পদ্ম ঝি, হাজারী ঠাকুরের “পদ্মদিদি।” যদিও বেচু চক্কত্তিই এই হোটেলের মালিক, তবুও পদ্মঝি’ই হোটেলের অধিষ্ঠাত্রী হিশেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বদাই সচেষ্ট। বেচু চক্কত্তিও তার কথার ওপরে কথা বলার ধৃষ্টতা খুব একটা দেখায় না।
হাজারী ঠাকুরের আজন্ম সলজ্জ সাধ, সে নিজে একটা হোটেল খুলবে। অন্যের অধীনে আর কত? অনেক পরিকল্পনাও করে সে। কিন্তু সমস্যা একটাই, তার কোনো অর্থকড়ি নেই। মূলধনের অভাবে তার পরিকল্পনা, তার ইচ্ছে কখনোই আলোর মুখ দেখেনা।
এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো যাপিত জীবন। কিন্তু আকস্মিকভাবে উপন্যাসে আসে অপ্রত্যাশিত বাঁক, পদ্ম ঝি “আদর্শ হিন্দু হোটেল” থেকে বাসনকোসন চুরির অভিযোগে হাজারী ঠাকুরকে চোরের অপবাদ দিয়ে হোটেলছাড়া করেন। পায়ের নীচের সামান্য, শক্ত ভূমিটুকু হারিয়ে হাজারী দেবশর্মা তখন নিঃস্ব, রিক্ত। একগতিতে চলা উপন্যাসের গতিতে আসে পরিবর্তন। একটু নড়েচড়ে বসলেন তাইনা?
তবে, হাজারী বামুন হাল ছাড়েনা। এখানে সেখানে জীবিকার আশায় ঘুরে ঘুরে নিজের একটা হোটেল বানানোর টাকা জোগাড় করে ফেলে সে একদিন। অযাচিত অনেকের অপ্রত্যাশিত সাহায্যে হাজারী ঠাকুর আবার যখন নিজের একটা হোটেলের স্বপ্নে বিভোর, তখন আবারও বিপত্তি ঘটে। কী সেই বিপত্তি? হোটেল শেষমেশ বানাতে পারবে তো সে?
ব্যক্তিগত মতামত :
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় উপন্যাসে ব্যক্তি-মানুষের খারাপ-ভালো দুটো দিকই দেখাতে সমর্থ হয়েছেন। মানুষ আদতে ভালো না খারাপ? এ প্রশ্নের উত্তর বহুকাল ধরে বহু সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানীরা অন্বেষণ করে এসেছেন। কারো মতে, মানুষ খারাপ, তো কারো মতে ভালো। কেউ বা একটু এগিয়ে গিয়ে ভেবেছেন যে মানুষ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ভালো বা খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখায়। সবদিকেই রয়েছে অনেক যুক্তি ও তর্কের অবস্থান। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাসটির মাধ্যমে পাঠকেরা মানুষের সহজাত ভালো-খারাপ এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখানো- এ সব বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতিই পাবেন। এবং উপন্যাসের শেষে আসলে প্রশ্নটির উত্তর কী, তা ভাববার অবকাশও রয়েই যায়।
পরিশেষে বলতে চাই, “আদর্শ হিন্দু হোটেল” উপন্যাসটি মানুষকে অনুপ্রেরণা দেবে, শেখাবে হাল না ছাড়ার মানসিকতা। প্রতিভা থাকলে সে যে প্রকাশিত হবেই, সামান্য সাহায্য পেলে কেউ যে সফলতার সর্বোচ্চ ধাপে যেতে পারে, ঘুরে দাঁড়াতে পারে কোণঠাসা অবস্থা থেকে, হেরে যেতে যেতেও জিতে যেতে পারে, তার জ্বলজ্বলে, মিটমিটে, জ্বলন্ত উদাহরণ “আদর্শ হিন্দু হোটেল।”